সর্বশেষ

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জুয়েলের 'হাতের মোয়া'

প্রকাশ :


/ অস্ত্র হাতে নিয়ে করছেন ধূমপান। চৌদ্দগ্রামের জুয়েলের এই ছবি এখন ভাইরাল /সংগৃহীত

২৪খবরবিডি: 'কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মোস্তফা মনিরুজ্জামান। এলাকায় তিনি জুয়েল নামেই পরিচিত। এক সময় বেলজিয়ামে থাকায় কেউ কেউ তাঁকে ডাকেন বেলজিয়াম জুয়েল নামেও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অস্ত্র হাতে তিনি এখন ভাইরাল। অত্যাধুনিক মডেলের সেই অস্ত্র নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনাও। কেউ কেউ বলছেন, এমন 'ভারী' অস্ত্র গেল কী করে তাঁর কাছে? যদিও সমকালের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুয়েলের নামে ওই অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। দেখতে অস্ত্রটি ভারী মনে হলেও এটি পয়েন্ট টু টু বোরের, যা পাবলিক বোর হওয়ায় লাইসেন্স পাওয়া যায়।'

-অবশ্য অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 'লাইসেন্স থাকলেও এ ধরনের অস্ত্র জনমনে ভীতি ছড়ায়। এজন্য দেখতে ভারী, এমন অস্ত্র লাইসেন্সের বিপরীতে বিক্রিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এর আগে পয়েন্ট টু টু বোরের উজি মডেলের রাইফেল আমদানিও নিরুৎসাহিত করে সরকার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অস্ত্র নিয়ে ভাইরাল হওয়া জুয়েলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এর পরও তিনি অস্ত্রের লাইসেন্স পেলেন কী করে- সেই প্রশ্নও উঠেছে। তাঁর নামে ইস্যু করা অস্ত্রের লাইসেন্সের কপিতে দেখা যায়, গত বছরের ২৯ আগস্ট কুমিল্লা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ইস্যু করা হয়েছে সেটি। লাইসেন্সের ২০২১-২০২২ সাল পর্যন্ত নবায়ন করা হয়েছে।'

-স্থানীয় লোকজন বলছেন, দলে কোনো পদ-পদবি না থাকলেও জুয়েল চৌদ্দগ্রামে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কর্মী হলেও দাপটের সঙ্গেই চলেন। সব সময় অস্ত্র হাতে থাকায় লোকজনও তাঁকে 'সমীহ' করে চলেন। নির্দিষ্ট কোনো পেশা না থাকলেও রাজনীতির পাশাপাশি নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার বিকেলে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদারের ওপর সন্ত্রাসী হামলার নেতৃত্ব দেন এই জুয়েল। পরে বিদেশি অস্ত্র হাতে থাকা তাঁর দুটি ছবি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর পরই আলোচনায় আসেন তিনি। যদিও ভাইরাল হওয়ার পর আত্মগোপনে তিনি।

'পুলিশের দাবি, ভাইরাল হওয়া ছবি দুটি আগের। হামলার সময়ের নয়। তবে বিষয়টি তদন্তের পর প্রমাণ হলে জুয়েলের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে অভিযান চালাচ্ছে।'

-স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নালঘর গ্রামের আলী আকবর মজুমদারের দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে জুয়েল ছোট। জুয়েলের বড় ভাই মোস্তফা নুরেরজ্জমান খোকন ছিলেন চৌদ্দগ্রামের শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। জুয়েলের বোনেরা সবাই বেলজিয়াম প্রবাসী। জুয়েলও দীর্ঘদিন বেলজিয়ামে অবস্থান করে বছর খানেক আগে দেশে ফিরে এসে যুবলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। জুয়েল এবং তাঁর পরিবার স্থানীয় এমপি ও সাবেক রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হকের অনুসারী। তবে দলে তাঁদের কোনো পদ-পদবি নেই। বাবা আলী আকবর মজুমদার এবং হামলায় আহত চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদার চাচাতো ভাই। এক সময় মুজিবুল হকের সঙ্গে শাহজালাল মজুমদারের গুরু-শিষ্যের মতো রাজনৈতিক সখ্য থাকলেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত ৮ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি এবং ১৮ জানুয়ারিতে তাঁকে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়কের পদ থেকে অনাস্থা প্রদান করা হয়। এর পর থেকে গুরু-শিষ্যে বেশ টানাপোড়েন ও গ্রুপিং চলছে। এতে জুয়েলও শাহজালালের সঙ্গ ত্যাগ করে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন।

-ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, জুয়েল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের মিয়াবাজারের গ্রিন ভিউ রেস্টুরেন্টের সামনে এক হাতে অস্ত্র ও অন্য হাতে সিগারেট টানছেন। অন্য একটি ছবিতে একটি রাস্তায় একই অস্ত্র হাতে হাঁটছেন জুয়েল। আহত শাহজালাল মজুমদারের অভিযোগ, ভাইরাল হওয়া অস্ত্র নিয়েই মনিরুজ্জামান জুয়েলের নেতৃত্বে ৭-৮ জন সন্ত্রাসী তাঁর গাড়ির গতিরোধ করে। তবে জুয়েল আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জুয়েলের 'হাতের মোয়া'

'গতকাল শুক্রবার স্থানীয় এমপি মুজিবুল হক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস ছোবহান ভূঁইয়া হাসানের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা ফোন রিসিভ করেননি। তবে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা ২৪খবরবিডিকে বলেন, চেয়ারম্যানের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান এখনও কোনো অভিযোগ দেননি। তিনি আরও বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পেরেছে হামলার সময় জুয়েলের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। তাঁর বিরুদ্ধে টাকা-পয়সা লেনদেনের তিনটি মামলায় থানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে, তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।'

-ভাইরাল হওয়া অস্ত্রের বিষয়ে ওসি বলেন, তারা তদন্ত করে দেখেছেন অস্ত্রটি লাইসেন্স করা। পুরো বিষয়টি তদন্ত চলছে। সে বৈধ অস্ত্র অবৈধ কাজে প্রদর্শন করার প্রমাণ পেলে লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হবে।

'ঢাকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অ্যান্টি ইলিগ্যাল আর্মস টিমের একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ২৪খবরবিডিকে বলেন, এম-ফাইভ মডেলের এই অস্ত্র অটোমেটিক নয়, এটি সিঙ্গেল শটের। তবে এটি দেখে জনভীতি তৈরি হওয়ায় এসব অস্ত্র ব্যবহারে সব সময়েই নিরুৎসাহিত করা হয়। ওই কর্মকর্তা বলেন, কয়েক বছর আগে এ ধরনের অস্ত্র আমদানি করেছিলেন বৈধ ডিলাররা।'

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত